গাঁটছড়া
– সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়
আমাদের এই গ্রাম বাংলায় একটা সময় ছিল যখন প্রায় প্রত্যেক অবস্থাপন্ন ঘরেই কাছের বা দূরের বিপদগ্রস্ত আত্মীয়রা এসে দীর্ঘ দিন থেকে যেতেন আশ্রিত হিসাবে। অবাক হলেন? না না অবাক হওয়ার কিছু নেই, এটা সত্যি। কখনো কখনো তো আত্মীয়তা এতো দূর সম্পর্কের হতো যে তা লিখতে গেলে হয়তো একটা পাতার অর্ধেকটা খরচ হয়ে যাবে। আস্তে আস্তে তাঁরা বাড়ির সদস্য হয়ে যেতেন, আবার কেউ কেউ তো দাপটের সঙ্গে রাজত্বও চালাতেন আশ্রয় পাওয়া বাড়িতে। তেমনি অমিতদের বাড়িতেও ওইরকম নিকট দূর মিলিয়ে জনা পাঁচেক আত্মীয় থাকতেন। তার মধ্যে দুজন বিমল আর শানু ছিল অমিতেরই বয়সী। শানু সম্পর্কে অমিতের কাকা হতো তাই অমিত তাকে শানুকাকা বলতো আবার তুইও বলতো। যাক, এদের কথা কেন বললাম সেটা পরে বলছি, আপাতত একটু অন্য দিকে ঘুরে আসি। সালটা উনিশশো তেশট্টি, অমিত আই এসসি পাশ করে হঠাৎই একটা মার্চেন্ট কোম্পানিতে কাজে ঢুকে পড়লো। অমিতের বাবা অবাক হয়ে বললেন, ‘তুই চাকরি করবি! আর পড়াশোনা করবি না’? অমিতের সাফ কথা তার পড়াশোনা আর ভালো লাগছে না, সে রোজগার করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। অমিতের বাবা আর কি করেন? ছেলের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে আর জোরাজুরি করলেন না। দেখতে দেখতে ছয় সাত মাস কেটে গেল। অমিত চাকরি করছে ঠিকই, কিন্তু তার বদমাইশি একটুও কমেনি। সেই আড্ডা মেরে, তাস খেলে রাত করে বাড়ি ফেরা, সেই নাটক আর সেই ভবতারিণী আলু আশ্রম। একদিন কথা প্রসঙ্গে অমিতের বাবার পাড়ার এক বন্ধু বললেন, ‘বুঝলে ডাক্তার ছেলের এবার বিয়ে দিয়ে দাও। তাহলেই দেখবে বাইরের টান ছেড়ে ছেলে ঘরমুখী হয়েছে’। কথাটা অমিতের বাবার মনে ধরলো। অমিতের মাকে বলাতে তিনিও মত দিলেন। কিন্তু ঠিক সেই সময়ে আমাদের আশেপাশের গ্রামে খুব কলেরার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলো, আর অমিতের বাবা সেই নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। এখনকার মতো সেই সময়ে কলেরার চিকিৎসা এতো সহজলভ্য ছিল না। বিশেষ করে গ্রামের দিকে ওষুধ বা স্যালাইনের জোগান প্রায় ছিল না বললেই চলে। অমিতের বাবা আর ছঙ্কুর বাবা সারারাত ধরে বাড়িতে বসে স্যালাইন জল তৈরি করতেন। আর পরেরদিন সকালে সেই স্যালাইন জল শিশিতে করে ব্যাগে ভরে নিয়ে সাইকেল করে দুজনে বেড়িয়ে যেতেন দুদিকে। তারপর আট দশটা গ্রাম ঘুরে ফিরতেন সেই সন্ধ্যাবেলা। আর এই ব্যস্ততার মধ্যে অমিতের বিয়ের ব্যাপারটা তাঁর মাথা থেকে একরকম মুছেই গেল। হঠাৎ একদিন এক অনুষ্ঠান বাড়িতে অমিতের বাবার এক দূরসম্পর্কের দিদি অমিতের বাবাকে বললেন, ‘হ্যাঁ রে ছেলের বে দিবি? আমার জানা একটা ভালো মেয়ে আছে’। অমিতের বাবা আগ্রহ দেখাতে তিনি যে বাড়ির কথা বললেন অমিতের বাবার চিনতে অসুবিধা হলো না। গ্রামটা আমাদের দু’টো স্টেশন পর আর রাস্তায় গেলে আমাদের গ্রাম থেকে আট দশটা গ্রাম দূরে, মুখুজ্জে বাড়ি। অমিতের বাবা বললেন, ‘ঠিক আছে, আমি তো ওখানে রুগী দেখতে যাই, একদিন না হয় ঘুরে আসবো। তাঁর দিদি তো হাঁ হাঁ করে উঠলেন, ‘তুই ছেলের বাবা তুই যাবি কি! আমি ওদের খবর পাঠাচ্ছি, মেয়ের বাবা যাবে তোর কাছে’। অমিতের বাবা ছিলেন উদারমনস্ক মানুষ, হেসে বললেন, ‘না দিদি, সম্বন্ধ যখন আমার দিক থেকে যাচ্ছে তখন আমার যাওয়াটাই কর্তব্য’। তারপর হঠাৎই একদিন রুগী দেখতে গিয়ে তিনি হাজির হলেন সুবোধ মুখার্জির বাড়ি। আর গিয়েই সরাসরি বলে দিলেন তাঁর আসার উদ্দেশ্য। সুবোধ বাবু তো অবাক। কিন্তু কি আর করেন, ডাক্তার বাবু বলে কথা। এনে হাজির করলেন তাঁর পনেরো বছরের মেয়ে শুভাকে। সে তখন পুকুর পাড়ে পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে খেলা করছিলো। না সাজগোজ না কোনো আয়োজন। এ আবার কেমন কনে দেখা! কিন্তু তাতেই ডাক্তার বাবু কাত। এতো লক্ষ্মী প্রতিমা, এতো সুন্দরী মেয়ে হয়! একরকম কথা দিয়েই চলে এলেন অমিতের বাবা। শুনে অমিতের মা বললেন, ‘হ্যাঁ গো আমরা একবার দেখতে যাবো না’? অমিতের বাবা বললেন, ‘যাবে যাও, তবে সেটা শুধু ওনাদের পয়সা খরচ করাতে যাওয়া, কেননা ও মেয়েকে দেখে না বলার ক্ষমতা কারো নেই’? বাকি ব্যাপারগুলো খুব তাড়াতাড়িই মিটে গেল। বিয়ের দিনও ঠিক হয়ে গেল। অমিতের ওদিকে দোটানা অবস্থা। বিয়ের আনন্দ হচ্ছে ঠিকই আবার একটা চিন্তাও থেকে যাচ্ছে, মেয়ে যদি দেখতে খারাপ হয়! বাড়ির লোকজন বলছে ভালো, কিন্তু তাদের ভরসা কি? অমিত তো আর নিজে দেখেনি। সে গিয়ে ধরলো শানুকে, ‘দ্যাখ শানুকা আমার বিয়ের দিন তুইও আমার মতো সেজেগুজে যাবি। যদি মেয়েকে আমার পছন্দ হয় তাহলে আমি বিয়ে করবো, না হলে তোর সাথে বিয়ে দিয়ে দেবো’। শানু ছিল নিরীহ মানুষ, কি আর করে, আস্তে করে ঘাড় নাড়লো। বিয়ে আর দিন পনেরো বাকি, হঠাৎ অমিতের মাথায় বিনা মেঘে বজ্রপাত। অফিস থেকে তাকে বদলি করেছে বিহারে। দুদিনের মধ্যে চলে যেতে হবে। বাড়িতে এসে বললো। বাবা শুনে বললেন, ‘তাতে কি? চলে যাও, জয়েন করে ছুটি নিয়ে চলে এসো’। সেই মতো পরের দিন অমিত একেবারে বাক্স প্যাঁটরা নিয়েই বেড়িয়ে পড়লো। অফিসে গিয়ে বদলির চিঠি নিয়ে সোজা চলে যাবে নতুন কাজের যায়গায়। সঙ্গে চললো বিমল। তার দায়িত্ব হলো অমিতের সঙ্গে থেকে নতুন যায়গায় সব কিছু ব্যবস্থা করে দিয়ে আসা। অফিসে পৌঁছে বড়বাবুকে অমিত তার বিয়ের খবরটা জানিয়ে ছুটির কথা বললো। বড়বাবু চশমার উপর দিয়ে তাকিয়ে বললেন, ‘বিয়ে! এর মধ্যেই? হুঁ, কিন্তু ছুটির ব্যাপারে তো আমি এখান থেকে কিছু করতে পারবো না। ওখানে গিয়ে বলে দেখো। তবে জয়েন করেই ছুটি! কে জানে, দেখো চেষ্টা করে’। অমিত পড়লো মহা চিন্তায়, যদি ছুটি না পায়! তাহলে তো বিয়েটাই করা হবে না। এইসব ভাবতে ভাবতে হাওড়ায় ট্রেনে উঠে বসলো, সঙ্গে বিমল। লোকাল ট্রেনে বর্ধমান সেখান থেকে প্যাসেঞ্জার ট্রেনে হাটিয়া। ট্রেন চলতে লাগলো আর অমিতের চিন্তাও বাড়তে লাগলো, ‘ইস্ বদলি করার আর সময় পেলো না! কেন আর একমাস বাদে বদলি করলে কি এমন অসুবিধা হতো’? ট্রেনটা এসে একটা স্টেশনে দাঁড়িয়েছে, হঠাৎ বিমল বললো, ‘জানিস তো এই স্টেশন থেকে আমাদের বাড়ি পাঁচ মাইল’। আসলে ওখানে ছিল বিমলের মামার বাড়ি। ছোট বেলায় তার বাবা মারা যাওয়ার পর তার মা তাকে আর তার ভাই বোনদের নিয়ে বাপের বাড়ি চলে আসেন। তারপর একটু বড়ো হওয়ার পর বিমলের ঠিকানা হলো অমিতদের বাড়িতে। বিমলের কথায় অমিতের হুঁশ ফিরলো, আর হঠাৎই সে বাঙ্ক থেকে বাক্সগুলো নামিয়ে বিমলের হাত ধরে টেনে নিয়ে নেমে পড়লো সেই স্টেশনে। বিমল তো অবাক, ‘কি রে নেমে পড়লি’? অমিত বললো, ‘তোদের বাড়ি যাবো’।
-‘তোর চাকরি!’
-‘চুলোয় যাক চাকরি, তারপর চাকরি করতে গিয়ে বিয়েটাই ফস্কে যাক আর কি’। বিমল আর কি করে মামাবাবু বকবে টকবে বলে একটু গাঁইগুঁই করে অমিতকে নিয়ে চললো তাদের বাড়ি। সেখানে দুদিন কাটিয়ে অমিত বাড়ি ফিরে এলো। তাদের দেখে তো সবাই অবাক। অবশেষে সব ঘটনা শোনার পর অমিতের বাবা একটু নকল রাগ দেখালেন বটে কিন্তু মনে মনে তিনি খুব হাসলেন। কদিন বাদে অমিতের বিয়েও হয়ে গেল। শানু কাকা অমিতের কথা মতো সেজেগুজে গেল ঠিকই কিন্তু তার আর কোন দরকার হলো না। মেয়ের বাড়িতে পৌঁছবার পর অমিত একবার উঁকিঝুঁকি মেরে বৌকে দেখার চেষ্টা করতে গেল তো বাড়ির মহিলারা রে রে করে তেড়ে এলো, ‘না, বিয়ের আগে মোটেই বৌএর মুখ দেখা যাবে না’। অমিত পড়লো মহা বিপদে, মেয়ে না দেখে বিয়ে করবে কি করে? আর হঠাৎই তার মাথায় এলো তার মাথার টোপোর আর গলার মালাটার কথা। এ দু’টো থাকলে বিয়ের আগে বৌকে দেখা যাবে না। সে ঘরে গিয়ে মালা আর টোপোরটা পড়িয়ে দিলো শানুকে, আর তারপরেই নিজে সোজা গিয়ে হাজির হলো মেয়ে যেখানে বসে আছে সেই ঘরে। সে দেখলো কেউ তাকে গুরুত্বই দিচ্ছে না। অবশ্য নিজের হবু বৌকে দেখার পর শানুর কাছ থেকে মালা আর টোপোর কেড়ে নিতে তার বেশি সময় লাগেনি।
বিয়ের পাঁচ দিন পর বৌকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি গেল অমিত। ঠিক ছিল একদিন কাটিয়ে ফিরে আসবে। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির লোকেরা অমিতের বৌকে ছাড়লো না। ঠিক হলো দু’দিন পর অমিত গিয়ে নিয়ে আসবে। সেই মতো অমিত বাড়ি এসে ঠিক দু’দিন বাদে বিকেলবেলা চললো শ্বশুরবাড়ি থেকে বৌকে আনতে। কিন্তু বাড়ি থেকে বেরোতেই বিপত্তি, ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। দুঘন্টা দেরি করে অমিত যখন গিয়ে শ্বশুরবাড়ির স্টেশনে নামলো তখন সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে। স্টেশন থেকে শ্বশুরবাড়ি আরও তিন মাইল। রিক্সাওয়ালাকে শ্বশুরবাড়ির গ্রামের নাম বলাতে সে বললো, ‘না বাবু গেরামের ভিতরি যেতি পারবো নি, পিচ রাস্তায় গেরামের মুখ ওবদি নামায়ে দে আসতি পারি’। অমিত বললো, ‘কেন গো’? রিক্সাওয়ালা হেসে বললো, ‘হেঁ হেঁ বাবু ইখানে নতুন মনি হচ্ছি’? অমিত বুঝলো রিক্সাওয়ালা যাবে না, কিন্তু কেন যাবে না সেটা বুঝতে পারলো না। হ্যাঁ বৃষ্টি হয়েছে বটে রাস্তায় একটু কাদা হবে, সে তো বর্ষাকালে সব গ্রামেই হয়, তাই বলে রিক্সা যাবে না! যাক কি আর করা যাবে ওই হাফ মাইল পথ হেঁটেই যেতে হবে। অমিত খান ছয়েক দেশলাই কিনে রিক্সায় উঠে বসলো। সে এমনিতে খুব সাহসী, কিন্তু সাপে তার ভীষণ ভয়। সঙ্গে কোন আলো নেই, দেশলাই কাঠি জ্বেলে জ্বেলেই চলে যাবে বাকি রাস্তাটা। কিছুক্ষণের মধ্যেই গ্রামের মুখে বড়ো রাস্তার উপর তাকে নামিয়ে দিয়ে রিক্সাওয়ালা যেন ল্যাজ তুলে পালালো। অমিত একটু অবাক হলো, ‘কি ব্যাপার রাতে এখানে ভুত টুত বেড়োয় নাকি’! যাক ভুতে অমিতের ভয় নেই। অন্ধকারের মধ্যে অমিত দেশলাই জ্বাললো, আর তখনই বুঝতে পারলো রিক্সাওয়ালার পালাবার কারণ। রাস্তা কোথায়! এতো পুরোটাই চষা মাঠ। দেখে তো অমিতের হাল খারাপ। এই রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাবে কি করে! ইস্ আজকেই নতুন পাজামা পাঞ্জাবীটা পড়ে এলো, তার সঙ্গে নতুন কেনা সাদা রঙের রাদুর চপ্পল। একবার ভাবলো ফিরে যাবে। কিন্তু নতুন বৌয়ের এতো কাছে এসে ফিরে যাওয়ার মতো মনের জোর জোটাতে পারলো না অমিত। অগত্যা পা বাড়ালো। দু’পা যেতেই সাদা জুতো পাজামা কাদায় মাখামাখি। কিন্তু কি আর করা যাবে। হড়কাতে হড়কাতে চললো অমিত। একটু বাদেই তার মনে হলো সামনে যেন একটা লন্ঠনের আলো দুলতে দুলতে যাচ্ছে। অমিত একটু পা চালালো। লন্ঠনের আলোটা পেলে তবু একটু সুবিধা হবে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আলোর মালিককে ধরে ফেললো অমিত। ভদ্রলোক ঘাড় ঘুরিয়ে লন্ঠনটা তুলে বললেন, ‘কে? ও জামাই, এহেহে শ্বশুরবাড়ি আসার আর দিন পেলে না, কি অবস্থা বলো দেখি, এসো এসো আমার সঙ্গে এসো’। ধীরু কাকা, অমিতের শ্বশুরবাড়ির উল্টো দিকেই বাড়ি, স্টেশনে বড়ো মুদিখানার দোকান। দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরছেন। ধীরু কাকা এটা সেটা বলতে বলতে চলেছেন, পিছনে অমিত। হঠাৎ অমিতের একটা পা কাদার মধ্যে প্রায় হাঁটু অবধি ঢুকে গেল, আর অমিত টাল সামলাতে না পেরে সেখানেই থপ করে বসে পড়লো। ধীরু কাকা হেঁ হেঁ করে হেসে বললেন, ‘কি জামাই পড়ে গেলে’। রাগে অমিতের মাথা অবধি জ্বলে উঠলো। যা হোক করে দাঁড়িয়ে পা টেনে বাড় করলো তো চটিটা রয়ে গেল কাদার মধ্যে। সর্বনাশ চটিটা কোথায় গেল রে বাবা! অমিত সেই কাদার মধ্যে হাত ঢুকিয়ে খুঁজে খুঁজে চটিটা টেনে বাড় করলো তো চটির সঙ্গে উঠে এলো এক দলা কাদা। পাজামা পাঞ্জাবী কাদায় ভর্তি। আর চটি পড়ে কাজ নেই। এখন অমিত নির্ভয়। চটি হাতে নির্দিঊধায় চললো ধীরু কাকার পিছনে। হঠাৎ অমিতের মনে হলো, ‘বুড়ো একবার পড়ে দেখি’। যেমন ভাবা তেমন কাজ, ধীরু কাকা চিৎপটাং, আর ধীরু কাকার লন্ঠনটা বার দুয়েক দপ দপ করেই নিভে গেল। অমিত মনে মনে খুশি হলেও মুখে আহা আহা করে উঠলো। তারপর অন্ধকারের মধ্যেই যাহোক করে টেনে তুললো ধীরু কাকাকে। আর উঠেই তিনি চিৎকার করে উঠলেন, ‘আমার গেঁজেটা! গেঁজে হলো একটা কাপড়ের থলি। দোকানের সারাদিনের বিক্রি বাটার টাকা পয়সা ওই গেঁজের মধ্যে করে ধীরু কাকার কোমড়ে গোঁজা ছিল। সেটা ধীরু কাকা পড়ার সময় কোমড় থেকে ছিটকে কোথায় পড়ে গেছে। ধীরু কাকা অস্থির হয়ে উঠলেন। অগত্যা অমিত দেশলাই জ্বেলে অনেক খুঁজে সেটাকে উদ্ধার করলো। আবার হাঁটা শুরু হলো, এবার পুরো অন্ধকারে। অবশেষে অমিত এসে পৌঁছল শ্বশুরবাড়ির দরজায়। কড়া নাড়তে শ্বশুর মশাই এসে দরজা খুলে বললেন, ‘কে’। অমিত বললো, ‘আমি’। শ্বশুর মশাই লন্ঠনটা মুখের কাছে তুলে ধরে বললেন, ‘কে বাবা তুমি’? অমিতের লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে। কাদা মেখে তার এমন অবস্থা হয়েছে যে শ্বশুর মশাইও চিনতে পারছেন না। অগত্যা অমিত নিজের নাম বললো, আর নাম বলার সঙ্গে সঙ্গে বাড়িতে যেন যুদ্ধ লেগে গেল। বাড়ির সবাই ছুটে বেরিয়ে এলো। ‘একি অবস্থা হয়েছে’, ‘এই বৃষ্টির মধ্যে কষ্ট করে কেন এলে বাবা’, নানা জনের নানা কথা। তারই মধ্যে জামা কাপড় ছেড়ে চান টান করে ঘরে ঢুকলো অমিত। আর নতুন বৌকে দেখে কষ্টটাও বোধহয় লাঘব হলো।
এর পর?